আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে সফরের প্রতিবাদে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে হেফাজতে ইসলামের কর্মী সমর্থকদের বিক্ষোভে বাধাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষেএকসময় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এসময় পুলিশের ব্যাপক গোলাগুলিতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় সাংবাদিকসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
জানা যায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুঁড়ে। জলকামানও ব্যবহার করে। থেকে থেকে সংঘর্ষ চলে দীর্ঘসময় ধরে।পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে হেফাজত অনুসারী মুসল্লিদের পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে দেখা যায়। হেফাজত অনুসারীদের পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। এসময় পুলিশ প্রথমে টিয়ারশেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গের চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছুড়তে শুরু করে। প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি চলে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। জানা গেছে, মোদি বিরোধী স্লোগান থেকেই বায়তুল মোকাররমের ভেতরে জুম্মার নামাজের আগেই সাদা পোশাকে পুলিশের সঙ্গে মারামারি শুরু হয়। পরে সেই মারামারি সংঘর্ষে রূপ নেয়। সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের মধ্যে প্রায় ৪০ জন ঢামেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কেউ কেউ প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চলে গেছেন। আহতরা হলেন- টুটুল (৩৯), দিদার (৪০), আরিফ (৩২), আজিজ (৪০), তারেক (২৫), শাকিল (৪৫), মুরাদ (৩৫), সোহেল (৩০), নজরুল ইসলাম (৪৬), চঞ্চল (৩৪), খায়রুল (৩৬) রিয়াদ (৩৫) আরিফ (৪৫), ইমন (৩২) জীবন(৪০), কলিমুল্লাহ (৩০), মাইদুল (২৯), একাত্তর টিভির সাংবাদিক ইশতিয়াক ইমন (৩০), গাজী মাজারুল (৫০), রুবেল মাতব্বর (৩১), ইমন খান (৩৮), সোহেল (২৩), লিমন (৩৮), আসাদুল (৩০), নিয়ামুল ইসলাম (২৩), সোহেল (২৯), আনোয়ার হোসেন (৪২), দুলাল হোসেন (৪০), মনির (২৪), অজ্ঞাত একজন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন হোসেন আহামেদ মিঠু (৩৪)। এছাড়া প্রবির দাস (৩৭), ডেইলি স্টার সাংবাদিকসহ ৫০ আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন- সাংবাদিক, পথচারী, আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের কর্মী, মুসল্লি, রিকশা চালক।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ গুলিতে নিহত ৪ হেফাজত কর্মী
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পুলিশের সাথে মুসল্লিদের সংঘর্ষের চার জন মারা গেছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ মিছিল বের করে তারা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চারজন মারা যান বলে পুলিশ জানিয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, আহত অনেককে হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তাদরে নাম–পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
হেফাজত নেতা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, পুলিশ বিনা উস্কানিতে গুলি করে চার হেফাজত কর্মীকে শহীদ করেছে। অনেকে এখনও হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছে। চমেক হাসপাতালসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় হেফাজতের কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
তার আগে বাদজুমা মিছিল শুরু হলে পুলিশ তাতে হামলা চালায়। এসময় সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ গুলি ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করেছে। এসময় বিক্ষুদ্ধ জনতা থানা ভবনসহ কয়েকটি সরকারি ভবনে ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে বৃহস্পতিবার ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় ইসলামি দলের মিছিলে পুলিশী হামলার প্রতিবাদে বাদ জুমা হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষার্থী ও মুসল্লিরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সহস্রাধীক জনতার মিছিলটি প্রধান সড়কে থানা এলাকায় গেলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এসময় দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মুসল্লিদের অভিযোগ পুলিশ মিছিলে গুলি করেছে। তাতে কমপক্ষে ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অনেকে। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত আহতদের কিরশা ও ভ্যানে করে হাসপাতালে নিতে মুসল্লিদের ছুটোছুটি করতে দেখা যায়। হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী অভিযোগ করেন পুলিশ শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিনা উস্কানিতে গুলি করেছে। এতে ছয়জন ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়েছে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ছাত্র এবং মুসল্লিরা ঢাকায় মিছিলে পুলিশী হামলার প্রতিবাদে এই মিছিল বের করেন। গুলির প্রতিবাদে মুসল্লিরা বিক্ষুদ্ধ হয়েছেন।
তবে জেলা পুলিশের হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মিছিলকারীরা আকস্মিক থানায় ভবনে হামলা করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কাজ করেছে। কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি চালিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে। পুলিশ জানায় ছাত্ররা থানার সামনে গিয়ে হঠাৎ ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। তাদের ছোঁড়া ইট-পাথরের টুকরায় থানার সামনের কাচের দরজা ভেঙে যায়। বিভিন্ন আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।